শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, কোনো কোনো মহল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট নিয়ে কথা বলছেন। আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে চাই, উপদেষ্টাদের কারো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেল আয়োজিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশ আইনের প্রস্তাবিত খসড়ার ওপর মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইন মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, যারা আয়নাঘর, গুম, খুন, নির্যাতন, রাষ্ট্রের সম্পদ লুট, মানবাধিকার লংঘন, ভোটাধিকার হরণ করেছে তাদের সেফ এক্সিট প্রয়োজন। সেই সেফ এক্সিটের জন্য আমরা কাজ করছি। আশা করছি, দেশবাসীকে আমরা সেটা দেওয়ার সূচনা করতে পেরেছি।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন- গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। এছাড়া দেশের আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশন প্রধানরা অংশ নেন।
আসিফ নজরুল বলেন, মানবাধিকার কমিশন গত ১৬ বছরে কেন ব্যর্থ হয়েছে, আমরা সেটি সনাক্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি, ইতিপূর্বে মানবাধিকার কমিশনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। এবার আমরা একটি স্বাধীন বাছাই কমিটির বিধান এনেছি, যেখানে সরকারের প্রভাবের বাইরে গিয়ে নাগরিক সমাজ কমিশনারদের বাছাই করবেন। কমিশনারদের নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি, সাক্ষাৎকারের বিধান প্রবর্তন করেছি, কমিশনারদের যোগ্যতা হিসেবে তাদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার রেকর্ড আছে কি না, সেগুলো দেখার কথা বলেছি। আমরা কমিশনারদের সংখ্যা ৩ থেকে ৭-এ উন্নীত করেছি। যেখানে এক-তৃতীয়াংশ নারী এবং সংখ্যালঘু ও সুবিধাবঞ্চিতদের প্রতিনিধি রাখার বিধান করেছি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা কমিশনের ক্ষমতাকে সুসংহত করার চেষ্টা করেছি। আগের আইনে শৃঙ্খলা-বাহিনীর বিষয়ে কমিশন কোনো তদন্ত করতে পারত না। আমরা এই বিধান বাদ দিয়েছি। ফলে মানবাধিকার কমিশন যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে। পূর্বে কমিশন কেবল সুপারিশমূলক কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, আমরা এবার কমিশনকে ক্ষতিপূরণ আদায় কিংবা জরুরি যেকোনো আদেশ দেয়ার ক্ষমতা দিয়েছি, প্রয়োজনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করার ক্ষমতা দিয়েছি।
তিনি বলেন, কমিশনের আদেশ প্রতিপালনকে বাধ্যতামূলক করেছি। পূর্বে কমিশন সরকারি ও বেসরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমরা কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য কমিশনের ব্যয়কে রাষ্ট্রের বাধ্যতামূলক আর্থিক দায় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং অর্থব্যয়ে কমিশনকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়েছি। কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন, গ্র্যাচুইটি এসব সুবিধা ছিল না, ফলে কমিশনে মেধাবীরা বেশিদিন কাজ করতে চাইত না। আমরা তাদের জন্য সরকারি কর্মচারীদের সব সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
কমিশনের পরিচালনায় নাগরিক সমাজকে যুক্ত করার বিধান রেখেছি। নাগরিক সমাজের পরামর্শের ভিত্তিতেই আমরা এই আইন সংশোধন করেছি। এসব নতুন বিধান যুক্ত করার ফলে কমিশন এই অজুহাত দিতে পারবে না যে, তার আইনগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ভবিষ্যতে কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।